সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক :
ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শনিবার সকালে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিসহ বজ্রপাত এবং এর আঘাতে ঝড়ো হাওয়ায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
শনিবার (৪ মে) সকালে ভোলা সদরে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে ঘর ভেঙে চাপা পড়ে রানী বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছেন।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত রানী বেগম ওই এলাকার সামসুল হকের স্ত্রী।
এছাড়া শনিবার সকালে লালমোহনের কচুয়াখালী চর থেকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একটি ট্রলার ডুবে গেছে। এতে চার থেকে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
কচুয়াখালীর চর থেকে জেলে নাছির উদ্দিন বলেন, শনিবার সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মাইনুদ্দিনে ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ৪-৫ জন আহত হন।
ভোলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপ-পরিচালক সাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ভোলাতে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৮০ কিলোমিটার।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল আমিন জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিক জানান, আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলগী গ্রামে আনোয়ারা বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
সকালে ঝড়ে নিজ ঘরের কাঠ গায়ের ওপর পড়লে তিনি মারা যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নে আম কুড়াতে গিয়ে ঝুমুর (১২) নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিশু মারা গেছে।
সকাল ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। ঝুমুর ওই এলাকার আবদুল হামিদের মেয়ে। জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ জন। শুক্রবার (৩ মে) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ইসমাইল (২) একই ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।
সুবর্ণচর উপজেলার কন্ট্রোলরুমে দায়িত্ব পালনরত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানান, চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে একজন নিহত ও চর ওয়াপদা ও চর জব্বর ইউনিয়নে ৩০ জন আহত হন। আহতদের সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ফণীর প্রভাবে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।
বাগেরহাটের রণজিৎপুরে দমকা হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। তার নাম শাহারুন বেগম (৫০)।
শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে বাড়িতে ধানের কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের আত্মীয় যুবলীগ নেতা শেখ আলফাজ জানান, দুপুরে শাহারুন বেগম ঘরের সামনে বসে ধানের কাজ করছিলেন। তখন তার মাথার ওপর চম্বল গাছের মোটা ডাল ভেঙে পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দীন জানান, দমকা হাওয়ায় হঠাৎ গাছের ডাল ভেঙে পড়ে শাহারুন বেগম মারা যান। ঘটনার খবর পেয়ে তিনিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই বাড়িতে ছুটে যান।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, ইটনা ও পাকুন্দিয়ায় বজ্রাঘাতে শিশুসহ ছয়জন মারা গেছেন।
শুক্রবার (৩ মে) দুপুর ১২ থেকে সাড়ে ১২টার দিকে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রপাত হয়। এতে ওই চারজন মারা যান।
মিঠামইনে ঝড়-বৃষ্টির সময় বাড়ির সামনের হাওর থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রাঘাতে সুমন মিয়া নামে সাত বছরের শিশু নিহত হয়। এ সময় গরুটি মারা যায়।
উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের বিরামচর গ্রামের সামনের হাওরে বোরো ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা যায় মো. মহিউদ্দিন (২২)। ইটনায় ধান কাটার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে রুবেল দাস (২৬) নামে এক যুবক মারা যান।
স্থানীয়রা জানান, ধান কেটে বাড়ি ফিরছিলেন রুবেল। পথে বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় গরুর ঘাস কাটতে গিয়ে আসাদ মিয়া (৪৫) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের কোষাকান্দা গ্রামে বজ্রাঘাতে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। চর ফরহাদি ইউনিয়নের চর আলগীর মৃত হালিম উদ্দিনের মেয়ে নুরুন নাহার ও ইন্নস আলীর ছেলে মজিবুর রহমান (১৭) মারা যান। তারা পথচারী ছিলেন। গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, দুপুরে বাড়ির সামনের জমিতে ঘাস কাটছিলেন আসাদ মিয়া। তখন ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বজ্রপাত হয়। পাকুন্দিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াস এ তথ্য জানিয়েছেন।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে আবদুল বারেক (৩৫) নামে এক কৃষক মারা গেছেন। শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রমিজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের মনিকা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত রুমালীর ছেলে বারেক শুক্রবার দুপুরের দিকে বাড়ির সামনের হাওরে ধান কাটার সময় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার পর বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বজ্রপাতে আপেল মিয়া (২০) নামে এক কৃষক নিহত হন।
শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বগডহর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে আপেল মিয়া বগডহর গ্রামের উরমুজ আলী মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সকাল থেকে এখানে থেমে থেমে মৃদু হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। এরই মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বগডহর গ্রামের জমি থেকে ধান কেটে ফেরার সময় আকস্মিক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই আপেল মিয়া প্রাণ হারান।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত রায় এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার তীব্র বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে শুক্রবার আহত মোটরসাইকেল চালক হাবিবুর রহমান মুসুল্লি (২৫) মারা গেছেন।
শুক্রবার (৩ মে) রাতে বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের মনসাতলী এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে পড়লে তিনি আহত হন। তিনি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওরকা পল্লি এলাকার বাসিন্দা
এ ঘটনায় আরও দুই জন আহত হন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বরগুনার পাথর ঘাটার উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার (৩ মে) রাতে ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তায় দেওয়া হয়েছে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বরিশালে ফণীর বিপদ প্রায়ই কেটে গেছে এবং ক্রমেই আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।